ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ , ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​বিএনপি প্রশাসনে বসে আছে—এ কথা বাচ্চাদের মতো: মির্জা আব্বাস

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ০৮:৩৪:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০৪-২০২৫ ০৮:৩৪:১৩ অপরাহ্ন
​বিএনপি প্রশাসনে বসে আছে—এ কথা বাচ্চাদের মতো: মির্জা আব্বাস ​সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, কেউ কেউ বলছে নির্বাচনে যাবে না। কয়েকদিন আগেও যাদের চিনতো না কেউ, এখন তারা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, এটা বাচ্চাদের মতো কথা, নির্বাচনে যাবো না। কারণ বিএনপি প্রশাসনে বসে আছে—এ ধরনের কথা বাস্তবতাবিবর্জিত। বিএনপি এখন প্রশাসনে কোথাও নেই। যারা এ কথা বলে, তারা আসলে নিজেদের সুবিধার কথা বলছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন আর প্রশাসনে নেই। বরং দেশের বিভিন্ন দফতারে আওয়ামী লীগের দোসররাই আসীন। প্রশাসনে যারা আছে, তারা গত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগী। নির্বাচনে না যাওয়ার অজুহাতে এ ধরনের কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। 

বুধবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি হবে না। আমি তার কোনো লক্ষণ দেখি না।

তিনি বলেন, ইংরেজিতে একটা কথা আছে— Hope for the best, think for the worst। আমি ভালো কিছু আশা করি। কিন্তু খারাপ দিকটাও মাথায় রাখি।

নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ড. ইউনূস সাহেব একবার বললেন নির্বাচন ডিসেম্বর, পরে আবার বললেন জুনে। এ দ্ব্যর্থক বক্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এতে সন্দেহ জাগে যে নির্বাচন আদৌ হবে কি না।

তিনি বলেন, কয়েকটি দল এমন শর্ত দিচ্ছে— এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওটা না হলে হবে না। তাহলে নির্বাচন হবে কীভাবে?

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, কেউ কেউ বলছে নির্বাচনে যাবে না। কয়েকদিন আগেও যাদের চিনতো না কেউ, এখন তারা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, আমি বললাম খারাপ কথা— নির্বাচনের সম্ভাবনা এখন কম। আবার ভালো দিক হলো— আমরা আশা করি নির্বাচনটা হবে। সাংবাদিক বন্ধুরা, দুইটাই লিখবেন কিন্তু। উল্টাপাল্টা করবেন না।

বক্তব্যের একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কিছু ব্লগারের কটূ মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ ও ইশরাক হোসেনকে নিয়ে ‘অযাচিত’ কথা বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা আব্বাস বলেন, জুনিয়র কাউকে নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। কিছু লোক শুধু সিনিয়র নেতাদের টার্গেট করছে। এরা দেশ ও জাতির শত্রু।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুব খারাপ। এখন জাতির, দলের ও জনগণের ঐক্য প্রয়োজন। যদি এ জাতিকে বিভক্ত করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ আবার ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যাবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলাদেশিদের বড় শক্তি ঐক্য। আমাদের কাছে অস্ত্র নেই, বড় সামরিক শক্তি নেই। কিন্তু ঐক্যের মাধ্যমে আমরা জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সফল হয়েছি। এরকম ঐক্য আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও। এখন আবার সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। বিপরীত শক্তি আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনার চারপাশে আওয়ামী লীগের লোকে ভর্তি। সুফিউর রহমানসহ অনেকে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। এরা আপনাকে ভুল পথে চালনা করবে। সচিবালয়ের ভেতর-বাইরে থাকা পাঁচজন সাবেক ও বর্তমান সচিব ও আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে না।

তিনি বলেন, আপনি নোবেল বিজয়ী। সারা বিশ্ব আপনাকে শ্রদ্ধা করে। আপনার অর্জন ধ্বংস করার জন্য এরা কাজ করছে। আমরা চাই আপনি সফল হোন। আপনার সফলতার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তারেক রহমানও চান আপনি সফল হোন।

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্য—বিএনপি প্রশাসনে বসে আছে—সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, এটা বাচ্চাদের মতো কথা। নির্বাচনে যাবো না। কারণ বিএনপি প্রশাসনে বসে আছে—এ ধরনের কথা বাস্তবতাবিবর্জিত। বিএনপি এখন প্রশাসনে কোথাও নেই। যারা এ কথা বলে, তারা আসলে নিজেদের সুবিধার কথা বলছে।

তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে প্রশাসনের ভেতর আওয়ামী লীগের দালালরা বসে আছে। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। বরং যারা সত্য কথা বলে, তাদের দোষারোপ করা হয়। এরা দেশের শত্রু।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু গ্রুপ বিএনপি ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে’—এমন প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, এ অপপ্রচারের প্রতিবাদ করতে হবে। ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে মানুষ দিশেহারা হয়েছে, পরিবার ধ্বংস হয়েছে। আমরা তাদের পুনর্বাসন করব কেন? বরং তাদের বিচার দাবি করি।

তিনি বলেন, সবাইকে দালাল বানানো যেমন ঠিক না। আবার দালাল আছে—এটা অস্বীকার করাও যাবে না। যাদের হাতে দেশ ধ্বংস হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।

ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মির্জা আব্বাস বলেন, আমি একসময় অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলাম। এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। আল্লাহর রহমতে খারাপ চালাইনি।

তিনি আরও বলেন, এ ঢাকাকে দুই ভাগ করেছে আওয়ামী লীগ। তারা এ কাজটা ভালোভাবে করেনি। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। উন্নয়নে জটিলতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, এখন যদি দুই ঢাকা আবার এক করা হয়, তাহলে সেটাও শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না। এর জন্য প্রক্রিয়া লাগবে। এখনকার ঢাকা আগের চেয়ে অনেক বড়। এক করতে হলে একটা গোছানো প্রশাসন লাগবে। ঢাকার অধীনে থাকা পুলিশ, ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ—সবকিছু সিটি গভর্নমেন্টের অধীনে আনা দরকার। এমন সুপারিশ স্থানীয় সরকার কমিশন করেছে। আজকের পত্রিকায় সেটা দেখলাম।

আলোচনায় মির্জা আব্বাস স্মরণ করিয়ে দেন, অনেকে জানে না, এখন যে কামান দিয়ে মশা মারা হচ্ছে, সেটা আমি আমদানী করেছিলাম। যদি এ কামান না থাকতো, তাহলে কী হতো? এ কামান এনেছিলাম সিবা-গেইগী আর রোল অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। তখন কেউ জানতো না এমন কিছু ঢাকায় আসবে। মশা নিধনের কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি আনতে আমি প্রথম উদ্যোগ নিই। এখন অনেকে জানেও না এসবের পেছনে আমার অবদান ছিল।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ